সেলিম উদ্দীন, ঈদগাঁও ;
কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নে ভুয়া পিতা সাজিয়ে মোহাম্মদ ছলিম নামের এক রোহিঙ্গার জন্ম নিবন্ধন করার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে ঈদগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ইউএনও বিমল চাকমা।
অভিযোগে জানা যায়, ইউছুফেরখীল গ্রামের বাসিন্দা নুরুল হুদার পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র কৌশলে সংগ্রহ করে রোহিঙ্গা মোহাম্মদ ছলিমের নামে জন্ম নিবন্ধন তৈরি করা হয়। সাম্প্রতিক ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমে ওই জন্ম নিবন্ধন ব্যবহার করে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য ইসলামাবাদ ইউনিয়ন পরিষদে আবেদন জমা দেওয়া হয়। তদন্তে গিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকর্তারা ভুক্তভোগী পরিবারের কাছ থেকে পুরো বিষয়টি জানতে পারেন।
পরে পরিষদে যোগাযোগ করলে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন কপিতে মোহাম্মদ ছলিমকে বার্মিজ (রোহিঙ্গা) বলে উল্লেখ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইউপি সদস্য দিদারুল ইসলাম সমাধানের জন্য চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ১৫ দিনের সময় নেন। তবে অজ্ঞাত কারণে এখনো ছলিমের জন্ম নিবন্ধন বাতিল হয়নি।
এলাকার একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জন্ম নিবন্ধন তৈরির সময় মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয় এবং ইউপি সদস্য দিদারুল ইসলাম এতে জড়িত থাকতে পারেন। ২০০৮ সালে করা আবেদনটি ২০২১ সালে বাস্তবায়ন হয়— কে বা কারা সহযোগিতা করেছেন তা তদন্ত সাপেক্ষে প্রকাশ করা জরুরি, না হলে এর মাধ্যমে সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
সূত্রে জানা যায়, রোহিঙ্গা মোহাম্মদ ছলিম প্রায় ৩০ বছর আগে মিয়ানমার থেকে ইউছুফেরখীল গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন এবং স্থানীয় হাবিব উল্লাহর মেয়ে মোস্তফাকে বিয়ে করেন। বর্তমানে তার ৪ মেয়ে ও ১ ছেলে রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, মেয়েদের বিয়ের সময় তাদের জন্ম নিবন্ধনের জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করা হয়, এমনকি ছেলেরও জন্ম নিবন্ধন করা হয়।
ছলিমের শ্যালক নুরুল আলম ওরফে হাকিম জানান, “তার ভগ্নিপতি রোহিঙ্গা—এটা সত্যি। তদন্তে যা আসবে, আমরা আইনগত বিষয় মেনে নেব।” তবে ছলিম কোথায় আছেন জানতে চাইলে পরে জানাবেন বলে জানান।
জানতে চাইলে ইউপি সদস্য দিদারুল ইসলাম বলেন, “আমি তাকে ভোটার করতে কোনো সহযোগিতা করিনি। বরং বিষয়টি জানার পর তার ফাইল আটকে দিয়েছি। ২০০৮ সালে যারা দায়িত্বে ছিলেন, তারা বিষয়টি করে থাকতে পারেন।” যদিও তার বক্তব্য অস্বীকার করলেও জন্ম নিবন্ধনের কপিতে তার স্পষ্ট স্বাক্ষর রয়েছে।
ঈদগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মছিউর রহমান জানান, “এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ এখনও থানায় জমা পড়েনি। বিষয়টি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ও উপজেলা প্রশাসনের অধীনে পড়ে।”
তবে অভিযোগপত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঈদগাঁও থানাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এরইমধ্যে থানার একটি পুলিশ দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে এসেছে।